❤️🩹 বুদ্ধিমতী মেয়ে
বুদ্ধিমতি মেয়ে
গভীর রাত। গোটা পৃথিবী সুপ্তির কোলে ঢলে পড়েছে। মৃদুমন্দ বাতাসে গাছের শুকনো পাতা ঝরে পড়ছে। চারিদিকে একটা গভীর নিস্তদ্ধতা বিরাজ করছে। আকাশে মেঘ জমাট বেধে রয়েছে। এই বুঝি আকাশটা ভেঙ্গে বৃষ্টি নামবে।
হালিমা জেগে ছিলো। নিজের কয়েকটা জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তখনো সে বিছানায় পিঠ লাগাতে পারেনি। হালিমার বয়স বার। সে কৈশোরেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে দাদির স্নেহের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। আরো কিছু কাজ করার পর ঘরের মেঝেতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।
হালিমাকে তার দাদি অত্যধিক আদর করতেন। রাতে ঘুম ভাঙ্গার পর তিনি হালিমার রুমে গিয়ে দেখলেন, সে বিছানায় নেই। মেঝেতে চাটাইয়ের উপর ঘুমিয়ে আছে। দরজা খোলা। ভিতরের দিক থেকে ছিটকিনিও লাগানো হয় নি। তাকে এ অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভাবলেন, ছোট মানুষ কাজ করতে করতে কখন যে ঘুমের সাগরে হারিয়ে গেছে টের পায়নি। আর বাস্তবতাও ছিল তা-ই।
হালিমা ঘুমিয়ে পড়ার পর একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যা এ যাবত কেউ জানতে পারে নি। ঘটনা হলো, আজ রাতে পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের এক চোর হালিমাদের বাসায় চুরি করতে এসেছিল। সে অতি সন্তর্পণে হালিমার রুমের সামনে এসে যখন দেখল, দরজা খোলা অবস্থায় একটি ছোট মেয়ে ঘুমিয়ে আছে তখন সে আস্তে আস্তে ঘরে প্রবেশ করে খাটের নিচে লুকিয়ে রইল। তার উদ্দেশ্য হলো, কিছুক্ষণ পর যখন সে নিশ্চিত হবে মেয়েটি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, ধরা পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই তখন সে মূল্যবান মাল-ছামানা নিয়ে উধাও হয়ে যাবে। এ চিন্তা নিয়েই সে অপেক্ষার প্রহর গুণতে লাগলো। এদিকে হালিমার দাদি হালিমাকে ডাকলেন। বললেন,
হালিমা! উঠো। বিছানায় চলো। সারারাত মেঝেতে শুয়ে থাকলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। তোমার বাকি কাজ কাল সকালে শেষ করতে পারবে।
হালিমা উঠলো। ধীরে ধীরে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বাতির মিটিমিটি আলোয় অপর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা এক চোরের পা দেখতে পেয়ে খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। সে ভাবলো, এ চোর কখন ভিতরে প্রবেশ করলো? পরক্ষণেই তার মনে হলো কাজ করতে গিয়ে মাঝে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর তখনই চোর বেটা..............।
হালিমার বয়স কম হলেও সে ছিলো বেশ বুদ্ধিমতি। তাই সে চোরের পা দেখতে পেয়ে ভীষণ ভয় পেলেও তা প্রকাশ না করে একটি উপস্থিত কৌশল অবলম্বন করলো। সে দাদিকে বললো, দাদি!
দাদি উত্তর দেওয়ার আগেই সে আবার বললো, সম্ভবত রান্নাঘরে বিড়াল ঢুকেছে। চলুন দাদি আমরা বিড়াল তাড়িয়ে আসি, নইলে ভাত তরকারী সব নষ্ট করে ফেলবে।
এ বলে হালিমা দাদির হাত ধরে দ্রুত রুমের বাইরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। এরপর সে দাদীকে আসল ঘটনা জানিয়ে আশে পাশের লোকজন ডাকতে লাগলো। ফলে অল্পক্ষণের মধ্যে জড়ো হয়ে গেলো প্রচুর সংখ্যক লোক।
হালিমা ও তার দাদিকে ভীত বিহ্বল দেখে লোকজন কারণ জানতে চাইলো। হালিমা সব কথা খুলে বললো। এবার লোকেরা দরজা খুলেই দেখলো, চোর বেচারা অসহায়ের মতো এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে পালাবার পথ খুঁজছে। কিন্তু আর যায় কোথায়? তারা চোরকে পাকড়াও করে ইচ্ছামতো উত্তম-মাধ্যম দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করলো। সেই সঙ্গে সকলের মুখে শোনা গেলো বুদ্ধিমতি হালিমার উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসী ভূমিকার প্রশংসা।
বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪
🌹 ধন্যবাদ 🌹
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা! এ ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা শুধু পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মেয়েদের দ্বারাও অনেক সময় অনেক দুঃসাহসী ও বুদ্ধিবৃত্তিক মহৎ কর্ম সম্পাদিত হয়ে থাকে। আল্লাহপাক সকল মা বোনকে অনুরূপ সৎসাহস দান করুন। আমীন।'
No comments