▶️ রোহিঙ্গা এক লারকি। পর্ব-৩
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এমন কোন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া অবশিষ্ট নেই, যাদের কোন প্রতিনিধি আসেনি। এসেছে বিবিসি ও আলজাজিরাও। আলজারিরার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আবদিস সালেম। মরক্কোর মানুষ। তবে তার ইংরেজি উচ্চারণ শুনে কেউ বিশ্বাস করবেন না যে, তিনি অ্যামেরিকান নন। সালেম, মাশরুর আবরারের ঘনিষ্ঠভাজন। গতকাল আবরার ও সালেম মূলত এই ব্রিফিং আয়োজনের অনুরোধ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
কনফারেন্স রুমে যথাসময়ে এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মাসুদ আদনান। সুদর্শন। বয়স চল্লিশের ঘর পেরিয়েছে সবে। কাঁচাপাকা চুল। অবয়ব জুড়েই অন্যরকম এক ভালো লাগা। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফলতার স্বাক্ষরও রেখেছেন। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েই মূলত এই সংবাদ সম্মেলন।
সুন্দর ঝরঝরে ইংরেজিতে শুরু করলেন মাসুদ আদনান। তার বাংলা করলে যা দাঁড়ায়।
: "প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই অবগত রয়েছেন। গত মাসে মানববন্ধনে হামলা চালিয়ে ইয়াঙ্গুনে ১০০ জন ছাত্র হত্যার ঘটনার নিন্দা ইতোমধ্যে আমরা করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ইয়াঙ্গুন বারবার দাবি করে আসছে, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অস্থিরতার অন্তরালে বাংলাদেশ কলকাঠি নাড়ছে। আমরা পুনরায় এ ধরনের উদ্ভট বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আগামীকাল ইয়াঙ্গুনে সর্ববৃহৎ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সেখানকার ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন। ইতোমধ্যে তারা রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ৬ দফা প্রস্তাবও পেশ করেছে। এটা সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের নাক গলানো বা কোন ধরনের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। কারণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অন্যদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ যেকোন অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আগের মতোই সোচ্চার আছে এবং থাকবে। সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তা সরকারের আচরণ সারা বিশ্বে খুবই উদ্বেগ তৈরি করেছে। তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার কোন উদ্যোগ তো নিচ্ছেই বরং তাদের দেশের সাধারণ জনগণের ওপর একের পর এক অমানবিক ও জঘন্য নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক আচরণ এবং সে দেশের জনগণের ন্যায্য অধিকারকে সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র দফতর মিয়ানমার সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।"
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রথমেই উঠে দাঁড়ান বিবিসির স্টিফেন ফেম। তিনি জানতে চান, ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের আন্দোলনকে বাংলাদেশ কিভাবে দেখে।
প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই মুখ খোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
: দেখুন, ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট মিয়ানমারের মানবাধিকার সংগঠন। তারা রোহিঙ্গা তথা মিয়ানমারের নাগরিকদের অধিকার নিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে সামাজিক আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ছাত্রহত্যার ঘটনায় তারা এই প্রথম কঠোর কর্মসূচির দিকে গেছে। রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনসহ অন্যান্য দাবিতে তারা ৬ দফা দিয়েছে। তাদের নেতা ফাতেমা মংডুর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট এখন থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তার আগের প্রেক্ষাপটকে তারা মডেল হিসেবে সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এখানে বাংলাদেশের কি করার আছে বলুন! মুক্তিযুদ্ধের মতো উনিশ শতকের এত সুসংগঠিত ও সফল জনযুদ্ধ থেকে কেউ যদি অনুপ্রেরণা নেয়, তাহলে আমরা কি করবো।
ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট ধাপে ধাপে এগিয়েছে। ১০০ জন ছাত্রকে হত্যা না করলে এ ধরনের ঘটনার অবতারণা হয়তো হতো না। এখন মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। গণমাধ্যমের জরিপই এটা বলছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় নেয়া বা মন্তব্য করার কোন অবকাশ নেই বলেই আমি মনে করি।
একটি প্রশ্নের উত্তরের পরই উঠে গেলেন ড. শফিক আদনান। স্মিত হেসে বললেন, আবারো দেখা হবে। ভালো থাকার প্রত্যাশা।
ইয়াঙ্গুনে গণবিস্ফোরণ এবং আবিদার মৃত্যু আজ ১৫ মার্চ। কাকভোরেই ইয়াঙ্গুনের প্রধান প্রধান সড়ক, অলি-গলিতে হাজার হাজার সেনার অবস্থান। সবখানে ছোপ ছোপ ভয়। জান্তা সরকারের কঠোর নজরদারি। চলছে অঘোষিত কারফিউ। ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে।
তবে নিজেদের বিক্ষোভকে পুরোপুরি অহিংস দাবি করে তা বাস্তবায়ন হবেই বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় চলছে নানা ধরনের সতর্কবাণী ও নির্দেশনা। সকাল ১০টায় রাস্তাগুলোর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, জনমানবহীন এক শহরে সেনাবাহিনীর মহড়া চলছে। বিবিসি ও আলজাজিরা ভোর থেকেই লাইভ সম্প্রচারে রয়েছে। অবশ্য ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের বিক্ষোভের নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টা।
সমগ্র বিশ্বের চোখ আজ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে। ১০০ জন ছাত্র হত্যার পর জাতিসংঘও বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যায় সদর দপ্তরে সংগঠনের মহাসচিব উইলিয়াম ফিউরিয়াস সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এদিকে, এতদিন মিয়ানমারের পক্ষে থাকলেও চীন ও ভারত ছাত্রহত্যার ঘটনায় নানা কারণে কঠোর নিন্দা জানাতে বাধ্য হয়েছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি এখন ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট তথা রোহিঙ্গাদের অনুকূলেই বলা যায়। তা ছাড়া পৃথিবীর সব সুখ্যাত টেলিভিশন মিডিয়ার সাংবাদিকরা এখন ইয়াঙ্গুনে।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট। হাজার হাজার সেনা সদস্য পুরো রণপ্রস্তুতিতে।
ঘড়ির কাঁটায় ১২:০১ মিনিট। হঠাৎ চতুর্দিক থেকে শ্লোগানের বজ্র নিনাদ। সেইভ সেইভ মিয়ানমার, সেইভ সেইভ হিউম্যানিটি। আবাসিক এলাকা, অফিস-আদালত, বিপণিবিতান, স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি থেকে হাজার হাজার মানুষ লাল পতাকা হাতে বেরিয়ে আসছে। প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের বেগে তারা রাজপথে নেমে যাচ্ছে। এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। বিক্ষোভ সফল করতে সম্ভবত তারা অফিস আদালত স্কুল কলেজেই রাত যাপন করেছে। নইলে এত বিপুল মানুষ মুহূর্তে সমবেত হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। ৫ মিনিটের মধ্যে ইয়াঙ্গুনের রাস্তাঘাট, পার্কসহ সব খোলা জায়গা দখলে চলে গেলো বিক্ষোভকারীদের। এখানে কত মানুষের আগমন হয়েছে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছে এই বিক্ষোভে।
তাৎক্ষণিক রাজপথের পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় সেনাবাহিনীও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সেনাসদস্যরা বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে খানিকটা নিরাপদে চলে গেছে। মানুষের ভিড়ে তাদের চিহ্নটুকু এখন আর ঠাহর করা যাচ্ছে না।
প্রায় ২০ মিনিট ধরে বিক্ষোভে-শ্লোগানে প্রকম্পিত মিয়ানমারের রাজধানী।
১২টা ৩০ বাজতেই কান ফেটে যাওয়া শব্দ। সম্ভবত মিসাইলের আওয়াজ। মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষের দিগ্বিদিক ছুটোছুটি। হ্যাঁ, সেনারা সাধারণ জনগণের উপর মিসাইল নিক্ষেপ শুরু করেছে। যে যেদিকে পারছে দৌড়ে পালাচ্ছে। অনেকে পায়ের তলায় পিষ্টও হচ্ছে। চিৎকার, হাহাকার, হইচই, গুলির শব্দ, বোম ফোটার আওয়াজ; ভয়ানক পরিস্থিতি। ৩০ মিনিটের মধ্যে সব শেষ। ইয়াঙ্গুনের অসংখ্য রাস্তাজুড়ে মানুষের লাশ, আহতদের গোঙ্গানি, রক্তের স্রোত, দেহের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অংশ; এক ভুতুড়ে, অস্থির অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যে দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে এখানে, আসলে বর্ণনা করার মতো কোন ভাষা সম্ভবত পৃথিবীতে আবিষ্কৃত হয়নি এখনো।
আবরার আজ সকাল থেকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে। মন্ত্রী মহোদয় ড. মাসুদ আদনান, মাশরুর আবরার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. সুভাস রায় এবং আলজাজিরার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আবদিস সালেম কনফারেন্স কক্ষে বসে টেলিভিশনে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দেখছিলেন। পুরো ঘটনা আলজাজিরায় লাইভ সম্প্রচারিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে সবার চোখে মুখে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
আবরারের উৎকণ্ঠার ব্যারোমিটারের পারদ শুধু উপরেই উঠছে। মনের মধ্যে ঘুরঘুর করছে আবিদা জেরিনের চিন্তাও। কি হচ্ছে? কি হতে যাচ্ছে। আবিদা জেরিন এখন কোথায়? সাধারণ জনগণের উপর সামরিক হামলার ঘটনায় ড. মাসুদ আদনানসহ সবাই যেন স্তব্ধ। বাকহীন।
আলজাজিরার বেলা ১টার খবরের দিকে সবার পলকহীন চোখ। যা জানা গেলো তা আরো ভয়ঙ্কর। চ্যানেলটি মৃতের সংখ্যা বলছে ৫০ হাজারের উপরে। আহত লক্ষাধিক। এ হামলায় ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতা চে চু মিন, শাহেদ সালেদিন, শ্রীং প্র, আবিদা জেরিনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে গণমাধ্যমটি। শেষের নামটি শোনার পর হু হু করে কেঁদে উঠে আবরার। আবরারের কান্নায় বিব্রত হয়ে পড়ে অন্যরা। সবাই সান্ত্বনা দিতে থাকে। কিন্তু কে শুনে কার কথা! পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সুভাস রায় আবরারকে নিয়ে ত্যাগ করেন কনফারেন্স কক্ষ।
কসোভো মডেল সাধারণ প্রতিবাদী মানুষের ওপর ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালানোর পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিক্ষোভরত জঙ্গিদের ওপর হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।
তবে, জান্তা সরকারের এইসব বিবৃতি বিন্দু পরিমাণও ধোপে টিকছে না এবার। হামলার পরপর সারাবিশ্ব থেকেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। অ্যামেরিকা, চীন, রাশিয়া এবং ভারত একযোগে তীব্র নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এক যৌথ ঘোষণায় তারা বলেছে, জান্তা সরকার সভ্যতার নিকৃষ্টতম ঘটনা ঘটিয়েছে। সুতরাং অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে এর বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে জাতিসংঘকে জরুরি বৈঠক করার আহবান জানিয়েছে। রাষ্ট্রটির প্রধানমন্ত্রী ফারুকী মোহাম্মদ দাবি জানিয়েছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি এবং যুগোস্লাভিয়া ভেঙে ৬টি রাষ্ট্র হতে পারলে কেন মিয়ানমারকে ভেঙে ২টি রাষ্ট্র করা যাবে না। তিনি আরো বলেছেন, অবিলম্বে কসোভোর আদলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাখাইনকে আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার পরিস্থিতি যথাযথ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের শাসনব্যবস্থা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করতে হবে। এসব দাবির প্রতি শতভাগ সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। তবে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জাতিসংঘ। সেজন্য সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে সংস্থাটি।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী তার বিবৃতিতে চমৎকারভাবে কসোভোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রাখাইনের স্বাধীনতা দাবি করেছেন। তিনি তার পূর্ণাঙ্গ বিবৃতিতে এ বিষয়ে বাংলাদেশের লেখক মোবায়দুর রহমানের একটি গবেষণাপত্রের কিছু অংশ সংযুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাতে লেখা আছে "কসোভো সার্বিয়ারই অংশ ছিলো। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। কসোভো স্বায়ত্তশাসন দাবি করার পর থেকেই সার্বরা ওই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ওপর প্রচন্ড দমন পীড়ন শুরু করে। কসোভোবাসী এই নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে সার্বরা গণহত্যা ও নারী ধর্ষণ শুরু করে। কসোভো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় নিপীড়নের মাত্রা গণহত্যার প্রচলিত ধরনকেও হার মানায়। কসোভোর মানুষও পাল্টা আঘাত হানতে শুরু করে। এ যুদ্ধ চলে ২ বছর ধরে, ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত।
অনেক ঘটনায় নিশ্চুপ থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্মক এ গণহত্যা বন্ধে হস্তক্ষেপ করে জাতিসংঘ। বিশেষ করে সার্বরা জাতিসংঘের কোন ধরনের নির্দেশনা, নিষেধাজ্ঞা না মানায় ক্ষুব্ধ হয় সংস্থাটির নীতি নির্ধারকরা।
তখন জাতিসংঘের সিদ্ধান্তক্রমে ন্যাটোর নেতৃত্বে কসোভোতে পাঠানো হয় শান্তিবাহিনী। ন্যাটোর বিমান হামলার মুখে সার্বরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এরপর ২০০৮ সালে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। জাতিসংঘের সামরিক হস্তক্ষেপের চূড়ান্ত পরিণতিতে যদি কসোভো স্বাধীনতা লাভ করতে পারে, তাহলে রাখাইনে উগ্র বৌদ্ধ ও মগ সেনাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না কেন?
বসনিয়া হারজেগোভিনার উদাহরণ আরো জ্বলন্ত। বসনিয়া এক সময় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। সাবেক যুগোশ্লাভিয়া থেকে দুটি প্রদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই শুরু হয় সংকট। এই দুটি প্রদেশ হলো স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া। ঐ দু'টি রাজ্য স্বাধীন হওয়ার পর যুগোস্লাভিয়ার যে অংশটি অবশিষ্ট থাকে তাদের নেতৃত্বে ছিল প্রধানত সার্বিয়া। বসনিয়াভুক্ত সার্বদের নেতা ছিলেন রাদোভান কারাডিচ এবং সার্বিয়া সরকারের প্রধান ছিলেন স্লোভেধান মিলোসেভিক। বসনিয়া হারজেগোভিনার আয়তন হলো ১৯ হাজার ৭৬৭ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ৩৫ লক্ষ ৫০ হাজার। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বসনিয়ার ৪৪ শতাংশ মুসলমান এবং ৩২ শতাংশ ছিল সার্ব। সংখ্যাগুরু হওয়ায় ১৯৯২ সালের ১লা মার্চ বসনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। সার্বরা বসনিয়াতে সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু পার্শ্ববর্তী সার্বিয়ার ফেডারেল সরকারে ক্ষমতায় ছিল সার্ব নেতা মিলোসেভিক তাই তিনি তার প্রশিক্ষিত পেশাদার সৈন্যদের বসনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের জন্য মাঠে নামিয়ে দেন।
বসনিয়ার মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় সংখ্যালঘুদের দমন নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তখন সার্বিয়ার সামরিক শক্তিকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা হয় এবং শুরু হয় মুসলিম গণহত্যা। এই মুসলিম গণহত্যা ধীরে ধীরে মুসলিম নিধনে পর্যবসিত হয়। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ সংখ্যাগুরু বসনিয়ার মুসলমানদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। তখন তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে ৩টি মুসলিম দেশ। দেশগুলি হলো সৌদি আরব, ইরান ও পাকিস্তান। প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য অর্থ সাহায্য করে সৌদি আরব।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাকিস্তান বিমানযোগে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। পশ্চিমা সংবাদপত্রের রিপোর্ট মোতাবেক ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ডের কিছু সংখ্যক সদস্য ইরান থেকে গিয়ে বসনিয়া মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল- এই ৩ বছর বসনিয়ায় যুদ্ধ চলে। অবশেষে ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করে। জাতিসংঘের তরফ থেকে ন্যাটোবাহিনী 'অপারেশন ডেলিবারেট ফোর্স' নামে সার্বদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায়। এই অভিযানের ফলে সার্বরা চূড়ান্তভাবে পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে এক লক্ষ মানুষ নিহত হন, যাদের প্রায় সকলেই ছিলেন বসনিয়ার মুসলমান। ২২ হাজার মুসলিম নারী ধর্ষিত হন।
২২ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হন। ৩ বছর পরে হলেও জাতিসংঘ সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে। একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হয় এবং সমস্যাটির একটি স্থায়ী সমাধান হয়।
বসনিয়া এবং কসোভোর সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার প্রায় সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। কসোভো এবং বসনিয়ার ক্ষেত্রেও জাতিসংঘ ৩/৪ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু যখন গণহত্যা, নারী ধর্ষণসহ সমস্ত মানবাধিকার লংঘন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন জাতিসংঘ সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। সেদিনও রাশিয়ার ভূমিকা ছিল চরম গণবিরোধী। বসনিয়া এবং কসোভোর গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায় কোন প্রস্তাব গ্রহণ করতে গেলে রাশিয়া প্রতিটি প্রস্তাবে বাধা দিত এবং প্রতিটি প্রস্তাবকে ব্লক করে দিত।
তবে ন্যাটো বাহিনী রুশ বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেই সেখানে সামরিক হস্ত ক্ষেপ করে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটছে। তিনটি বড় শক্তি মিয়ানমারের বর্বরতার নিন্দা করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ ঐ একটিই। চীন এবং রাশিয়া বিরোধিতা করবে বা ভেটো দেবে। তবে কসোভো এবং বসনিয়ার চেয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।
সুতরাং জাতিসংঘকে এখনই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। সমগ্র বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ তাই প্রত্যাশা করে।"
বিস্ময়কর ঘটনা হলো, ৩ ঘণ্টা না পেরোতেই মালয়েশিয়ার এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানায় অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ সর্বমোট ১১৩টি দেশ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের ব্রিফিং
সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সংস্থাটির মহাসচিব। তিনি স্পষ্ট করে জানান, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরও যদি মিয়ানমারে মানবাধিকার লংঘিত হয় তবে সামরিক পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত রয়েছে জাতিসংঘ। ১৬ মার্চ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাখাইনের স্বাধীনতার প্রস্তাবটি তুলে ধরা হবে বলেও জানান জাতিসংঘ মহাসচিব।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই ঘোষণার পর সবার চোখ এখন সংস্থাটির দিকে। সন্ধ্যার পর থেকেই শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দনে সিক্ত হতে থাকে সংস্থাটি। তবে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কি হয়, সেটা দেখতে উৎসুক যেনো গোটা বিশ্বই।
আবিদার শোকে আবরার
আবিদা জেরিনের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই আবরার খানিকটা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। সে ভাবতেও পারছে না এরকম একটি ঘটনা ঘটে যাবে।
আবিদা; যার স্নিগ্ধতা আবরারের বুকে সৌরভ ছড়িয়েছিলো, সেই আবিদা নেই। দুই দিন আগে তার সঙ্গে ইলেকট্রনিক চিঠি বিনিময়ের স্মৃতি বারবার আঘাত করছে আবরারকে। কোন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না সে। তবে, ব্যক্তিগত অনুভূতির বাইরে আবিদা জেরিনের মত দুঃসাহসী, মেধাবী ও দুরন্ত একজন সংগঠককে হারিয়ে ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট যে কি বিপুল ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেলো, সেই ভাবনাও আবরারকে কুঁকড়ে দিচ্ছে।
ওর এখন ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে মিয়ানমারে যেতে। অন্তত শেষবারের মতো আবিদা জেরিনের সংগ্রামদীপ্ত মুখখানা দেখতে। কিন্তু এখন কি সেই স্বাভাবিক পরিস্থিতি আছে? এ প্রশ্নও দোল খাচ্ছে বুকের ভেতর।
১৫ মার্চে মিয়ানমারের গণহত্যার ঘটনায় বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করার নৈতিক দায়িত্ব আবরারেরও। কিন্তু আবিদা জেরিনের বিরহ তাকে কোনোভাবেই কোন কাজে স্থির হতে দিচ্ছে না।
তবে, জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রেসব্রিফিং তার মনে খানিকটা প্রশান্তি এনে দিয়েছে। আগামীকালের বৈঠকে কিছু একটা হবে বলেও তার ধারণা হচ্ছে। এরপরও মনের ভেতর বেশ কিছু প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।
এরকম একটা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যার পর উল্টো ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিলো জান্তা সরকার, এটা কিভাবে সম্ভব? সংগঠনটির প্রধান নেত্রী ফাতেমা মংডুই বা কোথায়, তার কোন বিবৃতি পাওয়া যাচ্ছে না কেন? রাখাইনের স্বাধীনতা দাবি করে মালয়েশিয়ার দেয়া প্রস্তাবের আদৌ কিছু হবে কি? নানা প্রশ্ন জটিলতা পাকাচ্ছে আবরারের মনে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক জাতিসংঘের ছয়টি প্রধান অঙ্গের অন্যতম জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। আন্ত র্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এর প্রধান কাজ। নিরাপত্তা পরিষদের শান্তিরক্ষা অপারেশন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। রেজুলেশনের মাধ্যমে সামরিক অভিযানের ক্ষমতা আছে নিরাপত্তা পরিষদের। এমনকি কোন দেশের ওপর তারা সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপও করতে পারে। এটি জাতিসংঘের এমন একটি অঙ্গ, যেটি থেকে জারি করা রেজুলেশন সদস্য দেশগুলোর জন্য মানা বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তা পরিষদ পনেরো সদস্য নিয়ে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী পাঁচ পরাশক্তি চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী সদস্য। এই স্থায়ী ৫ সদস্য রাষ্ট্রই বলা যায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এদের কোন একটি রাষ্ট্র ভেটো দিলে উত্থাপিত যেকোনো প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
আজ দিনের প্রথম প্রহরেই নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন বসেছে। অধিবেশনের শুরুতে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা এবং রাখাইনের স্বাধীনতার একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে ফ্রান্স। প্রস্তাবের উপর আলোচনা করে বাকি ৪টি দেশ। সবাই একমত হয় যে, ১৫ মার্চ মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর যে হামলা হয়েছে সেটি গণহত্যা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। বৈঠকে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর গত ৭০ বছর ধরে চলা নিপীড়নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। সবশেষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য রাখাইনকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষার প্লাটফর্ম ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের নেতৃত্বে রাখাইনের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনেরও প্রস্তাব পাস হয় বৈঠকে।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে সিদ্ধান্তগুলো জানাতে ব্রিফিং এর আয়োজন করে জাতিসংঘ। সংবাদ সম্মেলনেই বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির মহাসচিব। এ খবর ছড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘকে সেলিব্রেট করে আনন্দ উৎসব শুরু হয়।
ঢাকার রাজপথে নামে মানুষের ঢল। শাহবাগ পরিণত হয় উৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে। রাখাইনের পক্ষে ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ডসহ শ্লোগানে-গানে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মুখরিত করে তোলে ছাত্র-জনতা। মিয়ানমারে গণহত্যায় জড়িত প্রত্যেকের ফাঁসির দাবি উঠে গণজমায়েতে। এই সমাবেশের অগ্রভাগে রয়েছেন মাশরুর আবরার। আজকের আয়োজনের অন্যতম সংগঠক।
বিকেল থেকে রাত দশটা অবধি চলে সমাবেশ। স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ এসেছে এখানে। ফেসবুক, টুইটারে মাত্র ১ ঘণ্টার নোটিশে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম অকল্পনীয়। আসলে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের ওপর দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষোভের উদগিরণ ঘটেছে এই জমায়েতে।
রাখাইন বাংলাদেশের অংশ; রাখাইনকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হোক; বাঙালি-রোহিঙ্গা ভাই ভাই; রাখাইনকে বাংলাদেশের বিভাগ চাই; ইত্যাদি নানা শ্লোগানও দেখা যাচ্ছে অনেক ব্যানার-ফেস্টুনে।
মঞ্চে প্রতিবাদী গান এবং বক্তৃতা চলছে। সংগঠকরা বক্তৃতা দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে মঞ্চে ওঠেন আবরার।
: প্রিয় বন্ধুরা, মানবাধিকারের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেই আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। জাতিসংঘ কর্তৃক রাখাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, সেজন্য সমগ্র বিশ্বের শত শত কোটি মানুষ সংস্থাটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। এ অর্জনের পেছনে আবিদা জেরিনসহ ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের হাজার হাজার কর্মীর আত্মত্যাগ মূল অনুঘটকের কাজ করেছে। তাই গভীর শ্রদ্ধাভরে মিয়ানমারের শহীদদের স্মরণ করছি। তবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে গত ৭০ বছর ধরে রাখাইনে যে গণহত্যা চলেছে, তার বিচারের বিষয়টি এড়িয়ে গেলে চলবে না।
অবশ্যই জড়িতদের আন্তর্জাতিক আদালতে কঠোর ও কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করাতে হবে। আর, একটি বিষয় আমি উত্থাপন করতে চাই যে, রাখাইন সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ। কয়েক যুগ ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে কেবলমাত্র বাংলাদেশ। সুতরাং রাখাইনের স্বাধীনতা অর্জনে সবচেয়ে আনন্দিত আমরা। তবে, আমরা এখনো প্রত্যাশা করি, পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে আমাদের উপকারের প্রতিদান দিয়ে রাখাইন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো করতালি উঠে সমাবেশে। শ্লোগান উঠে, রোহিঙ্গা-বাঙালি ভাই ভাই, রাখাইনকে আমরা চাই।
পর্ব-৪ এখানে......
No comments