❤️🩹 দুঃসাহসী এক তরুণীর কথা।
এক অকুতোভয় মুসলিম তরুণীর সাহসিকতা
সাঈদা। এক মুসলিম তরুণী। বয়স ষোল। তার একমাত্র ভাই আফযাল হোসাইন। আফযাল বড়। সাঈদা ছোট। একই পরিবারে দু'জন বড় হলেও মন মানসিকতা ও চিন্তা চেতনার দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে ছিলো বিস্তর ফারাক। সাঈদা ছিল আল্লাহ -রাসূল ও দীন আখেরাতে বিশ্বাসী। কিন্তু আফযাল ছিল কট্টর কমিউনিস্ট। তার নামটি তাকে মুসলিম পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে সে ইসলামি আক্বীদা ও মতাদর্শে মোটেও বিশ্বাসী ছিলো না। শুধু তাই নয়, রাশিয়ান লাল বিপ্লব আফগানিস্তান গ্রাস করার পর সে নির্বিচারে মুসলিম নিধনে মেতে উঠে। মুসলমানদের রক্ত দেখলে হো হো করে হাসে।
সাঈদাদের বাড়ি আফগানিস্তানের নাগমন প্রদেশে। গ্রামের নাম ডুবি শারান। তাদের গ্রামের পাশেই ছিল আরেকটি বড় গ্রাম। অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান এ গ্রামে বসবাস করেন।
বিশ্বাস ও আদর্শের দিক দিয়ে ভাই বোন দু'জন দুই দিগন্তে অবস্থান করলেও বুদ্ধিমতি সাঈদা ভাইকে কোনোদিন তা বুঝাতে দেয়নি। কারণ সে জানে যে, নিষ্ঠুর ও নির্মমতার প্রতীক ভাই আফযাল একথা জানতে পারলে তাকে আস্ত রাখবে না। ছলে বলে কৌশলে সে তার ক্ষতি করবেই। এমনকি সে বোনের বুকে বুলেট ছুড়তেও দ্বিধা করবে না।
একদিন রাশিয়ান রক্তপিপাসু লাল ফৌজরা ডুবি শারান গ্রামের পাশের গ্রামটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। উক্ত হামলায় মুসলিম নামধারী কট্টর কমিউনিস্ট আফযাল হোসাইনও শরিক হয়। এ অপ্রত্যাশিত আক্রমণে শত শত বনী আদম, মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু মৃত্যু মুখে পতিত হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় গ্রামের পথ ঘাট ও উন্মুক্ত প্রান্তর। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় গ্রামের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া নারী-পুরুষদের হৃদয়বিদারক আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। গ্রামের বুক চিড়ে বয়ে চলা ছোট্ট নদীটির পানিও রক্ত বর্ণ ধারণ করে।
অপারেশন সফল হওয়ার পর কমিউনিস্ট ফৌজরা আনন্দে ফেটে পড়ে। তাদের এ আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য আফযাল একশ কমিউনিস্ট ফৌজকে নিয়ে রাতে বাসায় ফিরে। এতে বুদ্ধিমতি সাঈদাও মনে মনে বেশ খুশি হয়। সে উহাকে প্রতিশোধ গ্রহণের মোক্ষম সুযোগ মনে করে। আসলে এতদিন সে এমন একটি সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিল।
রাশিয়ান ফৌজরা বাড়িতে প্রবেশ করলে সাঈদা অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তাদেরকে সাদরে বরণ করে নেয়। সে বলতে থাকে- তোমাদেরকে মোবারকবাদ। তোমরা আজ একটি চমৎকার ও প্রশংসনীয় কাজ করে এসেছো। তোমরা আমাদের বিপ্লবী শত্রুদের ধ্বংস করেছো। তোমাদের এ অভাবনীয় সাফল্যে আমার কতো যে আনন্দ হচ্ছে, তা প্রকাশ করার মতো ভাষা আমার নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপারেশনে শরিক হতে আমারও মনে চাচ্ছে। জানি না আমার সে আশা পূরণ হবে কি না। সে যাই হোক, তোমরা অনেক ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে এখানে এসেছো। তোমাদের কাছে আমার বিনীত নিবেদন হচ্ছে, তোমরা আজ রাতে আমাদের মেহমানদারী কবুল করো। খাওয়া-দাওয়া শেষে ক্যাম্পে না গিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে করতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়ো। মনে রেখো, এ বাড়িটি তোমাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
সাঈদার কথায় রুশ সৈন্যরা সীমাহীন খুশি হলো। তারা সানন্দে তার প্রস্তাব কবুল করলো। ভাই আফযালও কম খুশি হলো না। বোনের মুখ থেকে এ ধরনের কথা বের হউক এমনটিই সে চেয়েছিল।
হুঁশিয়ার সাঈদা অতি দ্রুত রাতের খাবার তৈরি করে তাদের সামনে পেশ করলো। সৈন্যরা সুস্বাদু খাবার খেয়ে প্রাণ ভরে মদপান করে মাতাল হয়ে মরণঘুমে বিভোর হলো। আফযালের অবস্থাও ব্যতিক্রম ছিলো না। সেও কিছুক্ষণ মাতলামী করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো।
গভীর রাত। নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশ। চাঁদের হালকা আলোতে দেখা যাচ্ছে, সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে। কেউ চিৎ হয়ে কেউ কাত হয়ে আবার কেউ বা উপুর হয়ে গোড়া কাটা গাছের মতোই এখানে সেখানে পড়ে আছে।
সাঈদার চোখে ঘুম নেই। এমন একটি পরিস্থিতির জন্যই সে গভীর আগ্রহ নিয়ে প্রতীক্ষা করছিলো। মনে মনে বলছিলো, ওগো মাওলা! তোমার শত্রু, রাসূল (সা.) এর শত্রু এবং দীন ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের হত্যা করার জন্য আমি আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিজ্ঞাকে বাস্তবায়ন করার তাওফীক দাও।
সাঈদা যখন বুঝল যে, হিংস্র হায়েনাগুলোর দিন-দুনিয়ার কোনো খবর নেই, মাতাল হয়ে মরার মতো ঘুমুচ্ছে, তখন সে একটি ধারালো তরবারী হাতে নিয়ে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাদের নিকট অতি সন্তর্পণে পৌঁছল। তারপর এক এক করে সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়ে অবশেষে ভাইকে জাগিয়ে তুলে বলল, ভাইজান! তোমার সাথীদের অবস্থা একটু ভালো করে দেখে নাও।
আফযাল নিজ সাথীদের রক্তের দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে দেখে প্রচন্ড ক্রোধে ফেটে পড়তে চাইলো। কিন্তু চাইলে কি হবে? সে তো মাতাল- তন্দ্রাচ্ছন্ন। তদুপরি হাতে কোনো অস্ত্রও নেই। এমতাবস্থায় সাঈদার উদ্যত তরবারীর অব্যর্থ আঘাত থেকে নিজকে বাঁচাতে পারবে বলেও মনে হলো না।
সাঈদা বলে চলল- ভাইজান! অযথা কেন ছটফট করছো? এই নরপশুদের ন্যায় তোমাকেও একই পরিণতি বরণ করতে হবে। আমি নিশ্চিত বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, সে দিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন দখলদার রুশ সৈন্য ও তোমার মতো ঈমান বিক্রিকারী বিশ্বাসঘাতকদেরও এমন করুণ ও অবমাননাকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে যা এখন তুমি নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছো। আমি দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাসও পোষণ করি যে, মুসলমানদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। তাদের রক্তের বিনিময়ে আফগানিস্তান একদিন একটি স্বাধীন সার্বভৌম ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই।
আফযালের হাত ছিল অস্ত্রশূন্য। তদুপরি রুশ সেনাদেরকে রক্তের সাগরে গড়াগড়ি খেতে দেখে সে অনেকটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুভয়ও তার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল অত্যন্ত প্রকটভাবে। তাই সে বোনের অগ্নিমূর্তি দেখে তার নিকট কাকুতি মিনতি করে প্রাণ ভিক্ষা চাইলো। কিন্তু ঈমানদার বোন দৃঢ়কণ্ঠে বললো- আমি তোমাকে মাফ করতে পারি না। মনে রেখো, আমি তোমাকে মাফ করলেও এই দেশ, এই মাটি এবং নিপীড়িত শিশু কিশোর বৃদ্ধ ও মজলুম নারী পুরুষের রক্ত তোমাকে কখনোই মাফ করবে না। তুমি একজন বিশ্বাসঘাতক, মানবরূপী হায়েনা। তোমার মতো নরপশুর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ বলে সে তরবারীর প্রচন্ড আঘাতে ভাইয়ের দেহ দ্বিখন্ডিত করে প্রদীপ্ত ঈমান ও দেশ প্রেমের অত্যুজ্জ্বল প্রমাণ পেশ করলো।
বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩
▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪
🌹 ধন্যবাদ 🌹
আল্লাহ পাক আলোচ্য ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার এবং ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার তাওফীক দান করুন। আমীন।
No comments