▶️ রোহিঙ্গা এক লারকি। পর্ব-১
বসফরাসের মুগ্ধতায়
আহা... বাতাসের আদর ছুঁয়ে দিচ্ছে শরীর। মনে হচ্ছে বিনি সুতোর চাদরে কে যেনো শরীরটাকে ঢেকে দিচ্ছে স্নিগ্ধ ওমে। সামনেই বসফরাস নদী। নদী আর আবরার মুখোমুখি। পরশু সে তুরস্কের ইস্তাম্বুল এসেছে। গতকাল ছিলো ওয়ার্ল্ড ইয়ং লিডার কনফারেন্স। বিভিন্ন সেক্টরে ৩২টি দেশের সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়ে এই আয়োজন। আবরারের জন্য যে অতিথিশালার ছোট্ট ছিমছাম কক্ষ বরাদ্দ হয়েছে, সেখানে থেকে এই বসফরাসকে রূপসী তরুণীর মতো দেখায়।
-হ্যালো, মিস্টার আবরার। হাউ আর ইউ?
আবরার সম্বিত ফিরে পায়। ১৮০ ডিগ্রি অ্যাংগেলে ঘাড় ঘুরিয়ে দ্যাখতে পায় পেছনে আবিদা জেরিন।
আবিদা, মিয়ানমারের মেয়ে। রাখাইনের মংডুতে বাড়ি। লং গাউনে জড়ানো একহারা শরীর। মাথায় উজবেকিস্তানি ক্যাপ। হলদে রঙের মুখে শেষ বিকেলের আভা। অন্যরকম একটা লুক। একই অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছে সে। আবরার এতক্ষণে নীরবতা ভেঙে জবাব দিলো।
- আই এম ফাইন। অ্যান্ড ইউ?
এক্সিলেন্ট। এনিওয়ে আমি কিন্তু বাংলা ভাষাতেও কথা বলতে পারি।
আবরারের চোখে মুখে বিস্ময়। কি বলেন!
ইয়েস। আমি পৃথিবীর প্রধান ১০টি ভাষায় অনর্গল বলতে পারি এবং লিখতে পারি।
- বাহ্, আশ্চর্য ঘটনাই বটে। না... আমি গতকালই মুগ্ধ হয়েছি। যেভাবে আপনি প্রথমে তার্কি এবং পরে ইংরেজিতে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করলেন! অবাকই হয়েছি।
- শুধু তাই নয়, আমি একদম শুদ্ধ বাংলাতেই বলতে পারি। আপনাদের লেটেস্ট বানানগুলোও আমার জানা। 'বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান' এর সর্বশেষ সংস্করণও আমার কাছে আছে। ওয়াও। আচ্ছা, আমার অবাক লাগে, মংডুর মতো একটা ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চলে আপনি কিভাবে বেড়ে উঠলেন এবং নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করলেন!
দীঘল হাসি আবিদার চিবুক জুড়ে। যেনো নূপুরের রিনিকঝিনিক ছড়িয়ে পড়লো বসফরাসের তরঙ্গে। এরপর একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস।
- জানেন মিস্টার আবরার। আমার বয়স এখন ২৭। এই ২৭ বছরকে নিয়ে যদি আমি লিখি তাহলে ২৭টা উপন্যাস হবে, কমপক্ষে।
এই প্রথম আবরারের নাম আবিদার মুখে। অন্যরকম অনুভূতি হলো তার। দেখুন, আবিদা, আপনাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে তা গত কয়েক শতাব্দীতে পৃথিবীতে হয়নি। সবই তো আমরা জানি। যেইবার রাখাইনে সবচেয়ে মারাত্মক আক্রমণ হলো, পুড়িয়ে মারা হলো হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে, লাখ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিলো, সেই সময়ে আমি ছোট ছিলাম। তবে টেলিভিশনে বাবার সঙ্গে দেখা সব খবরগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে।
আপনি ২০১৭ সালের কথা বলছেন?
হ্যাঁ।
তখন আপনার বয়স কত ছিলো?
আবিদা এক মুহূর্ত ভেবে বলে-
১০ বছর।
- ও, আর আমার ১১। আবরার হাসলো।
- মানে আমি আপনার এক বছরের সিনিয়র। আবিদা শব্দ না করেই হাসলো। সম্বোধনটা খানিক পরিবর্তন করলো এবার।
- ইয়েস ব্রাদার আবরার।
- আরে, 'মিস্টার আবরার'ই তো ভালো ছিলো! আবার ব্রাদার কেন?
- ও তাই নাকি!
আবিদার কণ্ঠে দুষ্টুমি।
- আচ্ছা, মিস্টার আবরার, স্যরি, ব্রাদার আবরার, ওরহান পামুকের নাম শুনছেন?
- শুনবো না মানে! ইস্তাম্বুলের কবি, নোবেল লরিয়েট।
- হুম, কাল আমি তার প্রেম ও বিপ্লবের কবিতা শুনাবো।
- গেট টুগেদার প্রোগ্রামে?
- হুম।
- অসাধারণ হবে।
সন্ধ্যের কালো রঙটাও বসফরাসকে ম্লান করতে পারেনি। দশদিগন্ত থেকে আজান ভেসে আসছে-হাইয়া আলাস্ সালাহ...
- মিস্ আবিদা, বিদায় নিতে হবে, আমি তবে উঠি।
- কোথায় যাবেন?
- কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধু অপেক্ষা করছে আমার জন্য। এই প্রোগ্রামে এসে একটা দাওয়াতও পেয়ে গেলাম। আগামী অক্টোবরে এখানে আমাকে আবার আসতে হবে। গাইতে হবে।
- ওয়াও, আপনি গান করেন নাকি?
- হ্যাঁ। বাহ, কাল গাইবেন তাহলে?
- গাইতে হবে, শিডিউলে সেরকমই দেখলাম। কিন্তু আপনার কণ্ঠে কবিতাও শুনতে চাই...
- হবে। আশা করছি। আমি তাহলে আরো মিনিট দশেক এখানে থাকবো। - কিছুক্ষণের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার নূর হাজেলা আসবেন। আমাদের কনফারেন্সের ডেলিগেট। তাকেই নিয়ে অতিথিশালায় ফিরবো।
ওকে গুড নাইট।
গুড নাইট।
এক মিলনায়তন এক আওয়াজ
ওয়ার্ল্ড ইয়ং লিডার কনফারেন্স। লাস্ট ডে। আজ গেট টুগেদার। মূলত কালচারাল অনুষ্ঠান। এবং ডিনার পর্ব। ডিনার পর্বের আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিলাল এরদোগান। তিনি তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রেসিডেন্টও। তাঁর অন্য পরিচয়, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ছোট ছেলে।
পুরো মিলনায়তনটাই ভিজার্টি ওয়াল বা কাল্পনিক দেয়াল দিয়ে তৈরি। সুনির্দিষ্ট মঞ্চে পারফর্ম করা হলেও হলরুমের প্রতিটি দেয়ালেই অনুষ্ঠানের প্রতিচিত্র ভেসে ওঠে।
এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ইউরোপের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হারিস জে।
আবরার যথাসময়েই এসেছে। এদিক ওদিক আঁতিউতি করছে। প্রচ্ছন্ন মনেই আবিদা জেরিনকে খুঁজছে।
হঠাৎ চোখ গেলো মঞ্চের ঠিক সামনের আসনের দিকে। হ্যাঁ, ওইতো... এগিয়ে গেলো আবরার।
হ্যালো মিস আবিদা।
হ্যালো। আপনাকেই খুঁজছিলাম। ওই আসনটিতে বসুন।
আবিদার পাশে বসে থাকা মেয়েটি ইন্দোনেশিয়ার ডেলিগেট।
- মিস্টার আবরার, সিস্টারের সঙ্গে পরিচিত হোন। ইন্দোনেশিয়ার মেয়েটিই হাত বাড়িয়ে দিলো আগে।
আই অ্যাম নূর হাজেলা, কামিং ফ্রম জাকার্তা।
থ্যাংকস, আই অ্যাম মাশরুর আবরার, কাম ফ্রম ঢাকা বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে তার্কি সঞ্চালক আবুবকর সিসিলি গেট টুগেদারের অনুষ্ঠানমালার বাকশো খুলে দিয়েছেন।
সম্মেলনের ৩ দফা ঘোষণা আবারো মনে করিয়ে দিলেন সংগঠনের চেয়ারপারসন আয়েসাল সেরেমেট।
সমগ্র পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত ও গণজাগরণ তৈরি করা নির্যাতিত মানুষকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসন করে সুশিক্ষিত করে তোলা এবং রাখাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং নির্যাতিতদের পক্ষে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা।
এরপর মঞ্চে গান নিয়ে এলেন তুর্কমেনিস্তানের আবদিস সামাদ ওমর। অ্যারাবিয়ান সম্ভরে সুর তুলে তিনি গাইলেন আফ্রিকান বিপ্লবী গান- ও নেলসন ম্যান্ডেলা।
এরপরই ডাক পড়লো মাশরুর আবরারের। মঞ্চের এক কর্নারে থাকা ঝকঝকে স্প্যানিশ গিটারটা এখন আবরারের হাতে।
ডেয়ার ব্রাদারস অ্যান্ড সিসটারস্। নাউ আই অ্যাম সিং এ হিউম্যানিটেরিয়ান লাভ সং-ডোন্ট লুজ হোপ, লিরিক অ্যান্ড টিউন আওয়ার বাংলাদেশি মিউজিশিয়ান-আমিরুল মোমেনীন মানিক। গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো করতালি-উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ ছাপিয়ে ৬ ভাষার এই গানটি এক সময় তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিলো ইউরোপ-অ্যামেরিকাতেও। সেটা আজ থেকে বছর ১৮ আগের কথা।
মঞ্চে গাইছেন আবরার। কিন্তু গোটা মিলনায়তন তার সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছে।
অ্যান্ড অব দ্য ডে আওয়ার প্রোপার্টি লাভ অ্যান্ড পিস উই ওয়ান্ট টু বি গ্রেট হিউম্যান মাইন্ড অব রিচ ব্যাড ডেজ অলরেডি গন গুড ডেজ আর কামিং সুন ডোন্ট লুজ হোপ ডোন্ট লুজ হোপ এভরি ডোর ক্লোজ বাট ইউ হ্যাভ স্কোপ...
আবরারের গান শেষে আবৃত্তির জন্য ডাক পড়লো আবিদা জেরিনের। হোয়াইট কালারের লং ফ্রক আর মাথায় উজবেকিস্তানের ক্যাপওয়ালা পারফরমার আবিদাকে চেনাই যাচ্ছে না।
আবিদার কণ্ঠে তুরস্কের কবি ওরহান পামুকের 'বিপ্লবের ঠিক আগে' কবিতার একেকটা পঙ্ক্তি পুরো মিলনায়তনে যেনো বারুদ ছড়িয়ে দিচ্ছিলো।
বিপুল উচ্ছ্বাসের মধ্যে আবৃত্তি শেষ করে আবিদা। মঞ্চ থেকে নামতেই আবরার বলে উঠে- ম্যাডাম, আমরা গর্বিত এই কারণে যে, আপনার মতো মেধাবী একজন মানুষ, আমাদের সহযোদ্ধা।
বিলাল এরদোগানের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর মঞ্চে ওঠেন হারিস জে।
তার অসাধারণ সব গানে তখন মন্ত্রমুগ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ডেলিগেটরা।
কিভাবে যে গেট টুগেদারের ২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলো কেউই বুঝলো না। মনে হলো-এই তো শুরু, এই শেষ!
অনুষ্ঠান শেষে বিমর্ষ মিলনায়তনের সামনে মুখোমুখি আবরার আর আবিদা। দু'জনের চোখে মুখে যেনো ইস্তাম্বুলের সব শোক ভর করেছে। দেখুন আবিদা, রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপনি লড়াই চালিয়ে যান। আমরা তো সাথে আছি। সাথে আছে সারা বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনারা বা আপনাদের অগ্রজ নাগরিকরা নিশ্চয়ই বুঝবেন যে, পরাধীনতা মানে কি ভয়ঙ্কর মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস করা। একটা মানুষের জন্য একটা স্বাধীন জনপদ যে কত অপরিহার্য তা আমাদের চেয়ে বেশি আর কেউ কি উপলব্ধি করতে পারবে! সেটা আমরা জানি।
আসলে রাখাইনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দরকার। ধীরে ধীরে সে লড়াইয়ের দিকেই হয়ত আমরা ধাবিত হবো। সেক্ষেত্রে আমাদের সামনে একমাত্র মডেল আপনাদের স্বাধীনতা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র... মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারাই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। - আপনি এবং আপনার জনগোষ্ঠী, রাখাইন রাজ্যের মানুষ এগিয়ে চলুন। এবার স্মিত হাসি আবিদার মুখে।
বন্ধু। বিদায় নিচ্ছি তাহলে। কাল সকালে আমার ইয়াঙ্গুনের ফ্লাইট।
আমারটা পরশু দিন।
আপনার ঢাকার ঠিকানা-ইমেল অ্যাড্রেসটাই সম্বল...
আবরারের মুখেও হাসি। তবে এই হাসি ভেঙে বুক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে নীলদহন। আল্লাহ হাফেজ বলতেই আবরারের চোখের কোনায় চিকচিক করে উঠলো এক চিলতে কান্না।
ঘরবন্দী ভাবনা
নীল এবং সবুজের লেপ্টানো দেয়াল। জানালার ফাঁক গলে রোদের বৃষ্টি। ঝলমলে বেডরুমের ঝুল বারান্দা। কার্নিশে দুটো টিকটিকি ভালোবাসাবাসি করছে। পাশেই সাদা কালো ফটোগ্রাফ। চোয়ালভাঙা লম্বা চুলের একটা মুখচ্ছবি। এটা আবরারের বিশ্ববিদ্যালয়বেলার ছবি।
সাউন্ড স্পিকারে বাজছে ভূপেন হাজারিকার গান। মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য...
আবরার উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। চোখে ভাতঘুম। ক'দিন আগে ইস্তাম্বুল থেকে ফিরেছে সে। ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স এবং মিয়ানমারের আবিদার স্মৃতি এখনো নতুন চকচকে। নানা বিক্ষিপ্ত চিন্তায় তার মনটাও ভালো নেই।
গতকাল খুলনায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেই ঘটনার উদ্বেগও রেখাপাত করে আছে আবরারের মনে। একটা বিষয় নিয়ে সে খানিকটা চিন্তিতও বটে। রাখাইনে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আবিদারা যে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আন্দোলন করছে সেটাও কি তাহলেও জঙ্গিবাদ? এই ধরনের চিন্তার বুদবুদ তার মাথায়।
বালিশের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালটা পড়ে আছে। হঠাৎ ওটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতেই নজরে আসে একটি লেখা। রোমান্টিক বিপ্লবের স্বপ্ন বিলাস। লিখেছেন আবু আরিজ। লেখাটা পড়তে থাকে আবরার।
...টিনএজ। ১৩ থেকে ১৯ বছরের সীমানা। উনুনে গরম তেলের মতো টগবগে তারুণ্য। আবেগ, স্বপ্ন আর উদ্যমের মাখামাখি। শুধুই নতুন কিছু করে দেখাবার নেশা। হোক সেটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক। এই সময়কালটাই দাহকাল! স্পর্শকাতর। টিএনজ বয়সে বাঁক নেয়া পথেই হাঁটতে হয় সারাজীবন। এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য।
অনেক সমাজবিজ্ঞানীর ভাষ্য, স্কুল-কলেজের সিঁড়ি ছুঁয়ে দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তরুণ জীবনে একবারও সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দ্যাখেনি।
সুকান্ত ভট্টাচার্য অবশ্য টিনেজের আঠারোকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন তাঁর কবিতায়।
"আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।"
উদ্ধৃতির শেষ একটা লাইন। 'সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে'। কিন্তু আত্মাকে কোথায় সঁপে দিচ্ছে টিনেজ বা তিরিশের মধ্যে বয়সবন্দী তরুণরা। সেটা কি বিপ্লব, না প্রতিবিপ্লব! না বিভ্রান্তের উপত্যকা। এখানেই প্রশ্ন।
আবরারের বেশ মনে ধরেছে লেখাটা। সুতরাং আরেকটু মনোযোগ দেয় লেখাটায়।
চারু মজুমদার। নামটা কি পরিচিত মনে হয়। ৬০ এর দশকে অনেক তরুণের স্বপ্নের নায়কের নাম। একটু খুলে বলি। ১৯৬৭ সালের কথা। ভারতের দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়ী গ্রাম। বিমল কিষাণ নামের এক চাষী নিজের জমি চাষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সেই জমি কেড়ে নেয় তার কাছ থেকে। এর প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন চারু মজুমদার ও কানু স্যান্যাল। তাদের নেতৃত্বে যুক্ত হয় প্রান্তিক ঘামে ভেজা মানুষ। এ ঘটনায় খুন হন পুলিশ ইন্সপেক্টর সোনম ওয়াংগিরি। পুলিশের গুলিতে মারা যান গ্রামের আট মহিলা ও দুই শিশু। এরপর এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো পশ্চিমবঙ্গে। বিত্তবান, জোতদার, ধনিক শ্রেণীর সম্পদে গরিবের অধিকার আছে, এমন শ্লোগানের বুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
চারু মজুমদার পরিণত হন স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির তরুণদের স্বপ্ন পুরুষে। এ আন্দোলনে না জেনে না বুঝে অথবা থরো থরো আবেগে ঝাঁকে ঝাঁকে যুক্ত হতে থাকে তরুণরা।
বিপ্লবের রোমান্টিসিজমে ভাসতে থাকে পাড়া-মহল্লা-শহরতলি।
অধিকারহারা নিম্নবর্ণের মানুষের মধ্যেও লাগে দিন বদলের স্বপ্নের আঁচ। নকশালের নেতারা আন্দোলন সফল করতে গ্রহণ করেন গেরিলা পদ্ধতি। সরকারি অফিসে, ধনিক শ্রেণীর বাসস্থলে চলতে থাকে হামলা। বেকায়দায় পড়ে জ্যোতি বসুর সরকার। ফলে যেকোনো উপায়ে সরকার নকশাল দমনে উদ্যত হয়। উপায়ান্তর না পেয়ে জ্যোতি সরকার গ্রহণ করেন অবৈধ পন্থা। তাদের হাত ধরে উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় মানুষ হত্যার নতুন রীতি 'ক্রসফায়ার'। কঠোর থেকে কঠোরতর হতে থাকে প্রশাসন। নকশালের পরিকল্পনাহীন অগণতান্ত্রিক গেরিলা আন্দোলন কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ক্রসফায়ারে নিহত হয় বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর হাজার হাজার তরুণ। পলেস্তরার মতো খসে পড়ে দিন বদলের ভ্রান্ত ফানুস। পুলিশি নির্যাতনে মারা যান চারু মজুমদার। আর আত্মহত্যা করেন কানু স্যান্যাল। কেউ কেউ পুরোনো ধ্যানকে আঁকড়ে ধরে গড়ে তোলেন নানা চরমপন্থী সংগঠন।
মোটা দাগে, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ মিলিয়ে সমাজ পরিবর্তনের ভ্রান্ত আন্দোলনের এই হলো করুণ উপাখ্যান।
আবরার নিজেকেই প্রশ্ন করে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কি কখনোই পরিপূর্ণ স্বাধীনতা এনে দিতে পারে? খানিকটা খটকা লাগে তার। আবারো চোখ রাখে আবু আরিজের লেখাটাতে।
এরও অনেক আগের ঘটনা। সোভিয়েত বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকেই সমাজ পরিবর্তনের নানা শ্লোগান বাংলার তরুণদের কাছে ভালো লাগার অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ওই ধারার জনপ্রিয় আইকন চে-গুয়েভারা কারো কারো কাছে এখনো স্বপ্নের কাঠখড়। তাছাড়া ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সুদীর্ঘ ঘাত লেগে আছে এ মাটির পরতে পরতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একদল তুখোড় তরুণ সমাজ বিপ্লব আর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখিয়ে গঠন করে জাসদ। কিন্তু তাদের অপরিপক্ক কর্মকৌশল পরবর্তীতে বুমেরাংয়ে পরিণত হয়।
১৯৭৯। সংগঠিত হয় অভূতপূর্ব ইরানি বিপ্লব। রেজা শাহের দমন- নিপীড়নের বিরুদ্ধে সেখানে এক সর্বজনীন ও সুপরিকল্পিত পরিবর্তন ঘটে। এর তাপ লাগে এই বঙ্গতেও। ৮০'র দশকে অনেক ইসলামী সংগঠন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ইরানের আদলে বাংলাদেশকে গড়ার। কিছু পন্থাও তারা গ্রহণ করে। কিন্তু সময়ের অতলে সেই সব স্বপ্ন এখন প্রাণহীন।
তারুণ্য-পরিবর্তনের ধ্যান বুকের মধ্যে ঝুলিয়ে রাখবে, এটা স্বাভাবিক প্রবণতা। এবং এই প্রবণতা ধারণ করেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন তিতুমীর, শরীয়তুল্লাহ, ফকির মজনু শাহ, প্রীতিলতারা।
কিন্তু বিপ্লবের সব স্বপ্ন বা পরিবর্তনের চিন্তাই কি যথার্থ? ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে উগ্র গোষ্ঠী যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে তার প্রক্রিয়া কতটা বাস্তব ঘনিষ্ঠ। বিভিন্ন অনুসন্ধানী তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, তাদের কর্মকৌশলেই সুগভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ। ফলে সেই সব অবুঝ তারুণ্যের রোমান্টিক স্বপ্ন বিভ্রান্তির অতলে পড়ে পরিণত হচ্ছে নৃশংসতায়। হয়ে উঠছে মানববিধ্বংসী।
এইখানে এসে থেমে যায় আবরার।
ও তাহলে, বিপ্লবের পূর্বশর্ত হচ্ছে গণবিপ্লব। আগে পরিবর্তনের পক্ষে জনমত তৈরি করা, এরপর চূড়ান্ত লড়াই। কিন্তু রাখাইনের আবিদারা মিয়ানমারের জান্তাদের বিরুদ্ধে নিজ দেশে কি কার্যকর জনমত গড়ে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নটা আবরারের মনে ঘুরতে থাকে। আবিদারা যদি তাই না পারে তাহলে রাখাইনের জঙ্গি সংগঠন আরসা-ই কি তাদের শেষ ভরসা হবে? না এটাওতো অবাস্তব বা অমানবিক। চিন্তার জাল ভাঙতে আবারো চোখ রাখে প্রবন্ধে।
45138&format=300x250&ga=g" type="text/javascript">
বিংশ শতাব্দীর শেষকাল। এবং একবিংশ শতাব্দীর উদ্বোধন সময়। বিশ্বব্যাপী আদর্শিক সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নতুন নতুন আগ্রাসন ভাবিয়ে তোলে গোটা বিশ্বকে। নানা ছুতোয় মুসলমানের ওপর নামে নির্যাতনের খড়গ। কিন্তু কে করবে এর প্রতিবাদ। দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন নির্জীব। দুনিয়াব্যাপী ইসলামী আদর্শের দলগুলোর ব্যর্থতায় বিপুল আদর্শিক শূন্যতা। ফলে সাম্রাজ্যবাদের একচ্ছত্র মালিক এখন অ্যামেরিকা-ইউরোপ।
কিন্তু স্বপ্ন তো আর বসে থাকতে পারে না। ফলে তৈরি হতে থাকে মিথ্যা স্বপ্ন। প্রতিষ্ঠিত হয় নানা উগ্রবাদী সংগঠন। গোষ্ঠী স্বার্থ ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে পৃষ্ঠপোষকতা পেতে থাকে সংগঠনগুলো।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদেরই বা লাভ কী?
'ইসলাম মানে সন্ত্রাস; ইসলাম মানুষ হত্যার ধর্ম'- বিশ্বব্যাপী এই অপবাদ প্রচার করে ইসলামের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে পারাটাই মূলত পৃষ্ঠপোষকদের সার্থকতা। এই অন্তর্নিহিত গূঢ়ার্থ সাধারণ জঙ্গিদের পক্ষে বোধগম্য হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। কারণ এই চক্রান্ত অনেক সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত।
একটু খেয়াল করুন, জঙ্গি সংগঠনগুলো কখনোই ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয় না। কখনো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন অভিযান তো দূরের কথা বিবৃতি পর্যন্ত দেয় না। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে তাদের কি কোনো কর্মসূচি আছে?
উল্টো তাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে হচ্ছে মুসলিম দেশগুলো।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধ সামনে রাখলে দেখা যায়, উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো গোটা পৃথিবীর মানুষকে মূলত তাদের কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করেছে।
ক. প্রকৃত মুসলমান- তারা মনে করে এই গ্রুপের মানুষ তারা নিজেরাই। খ. মুশরিক বা ধর্মচ্যুত- তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যারা মুসলমান হওয়ার পরও শরিয়া অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা না করে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপি তো বটেই; তাদের নেতৃত্বে জোটে থাকা ইসলামী দলগুলো এবং নির্বাচনে অংশ নেয়া সব ইসলামী রাজনৈতিক দলকে 'মুশরিকের দল' হিসেবে গণ্য করে তারা।
গ. কাফের-যারা সরাসরি ইসলামের শত্রু।
এখানে প্রশ্ন হলো তাহলে তারা কেন কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে হামলা করছে। তাদের যুক্তি হলো- আগে মুশরিকদের খতম করতে হবে কারণ তারা 'নামে মুসলমান' হওয়ার কারণে ইসলামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আত্মঘাতী হামলাকারী গ্রুপগুলো দুইভাবে জনবল বাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে টার্গেট টিনেজ বয়সীরা। এক. মোটিভেশন, দুই. এক্টিভেশন। মোটিভেশনের মাধ্যমে তাদেরকে একটি খেলাফতভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, যেখানে কোন শোষণ-বঞ্চনা থাকবে না।
'আর এই রাষ্ট্র কায়েমের জন্য হামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কেউ নিহত হলে তিনি শহীদ হবেন এবং সরাসরি জান্নাতে যাবেন'- এই কনসেপ্ট দিয়েই মূল মোটিভেশনের কাজটি তারা করছে। যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপ্লবী জীবনাদর্শে এই ধরনের হামলা বা আত্মঘাতী কাজের নজির একটিও নেই।
মোটিভেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা জনবলকে প্রস্তুত করে এক্টিভেশনের জন্য।
আমাদের দৃষ্টিতে তারা বিভ্রান্ত। কিন্তু তাদের দৃষ্টিকোণে তারা যথার্থ এবং সঠিক পথে আছে।
সুতরাং আমাদের সামনে সংকট গভীর। এবং খুবই মারাত্মক। তারা দুই ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে। এক হলো সশস্ত্র অন্যটি তাদের ভাষায় 'আদর্শিক'। আধুনিক শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে এক ধরনের ফেনোমেনা বা উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা তারা করছে।
আল-কোরআনের বেশ কিছু আয়াতে জিহাদ এবং কিতালের প্রসঙ্গ আছে। সেগুলো নাজিলের ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে। কিন্তু আত্মঘাতী গ্রুপগুলো এগুলোর বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করছে তাদের কাজের সুবিধা অনুযায়ী।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইসলামী স্কলারদের অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
আবরার আবার বিরতি নেয়। লেখাটায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আনা হলেও সামগ্রিকভাবে এটি বিশ্বজনীন লেখা। তাহলে উপায় কি, সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে আবরার। আবার ডুব দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালের আবু আরিজের লেখায়।
ইসলামে তিন ধরনের জিহাদ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে নফস্ বা প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ। জিহাদের বাংলা রূপ করলে দাঁড়ায়- ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সংগ্রাম করা।
প্রিয় টিনেজ বন্ধুরা,
যেকোনো স্বীকৃত আদর্শ দিয়ে সমাজ পরিবর্তন বা দিন বদলের স্বপ্ন দেখা দোষের কিছু নয়। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কেউ যদি ধ্বংসাত্মক পথে পা বাড়ায় তাহলে সেটা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কোন অমানবিক প্রক্রিয়ার হাত ধরে আসা তথাকথিত পরিবর্তন কখনোই স্থায়ী হয়নি। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, জনবান্ধব কর্মসূচি ও গণজাগরণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মূল বীজ নিহিত ছিলো '৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে, এই উপলব্ধি গভীরভাবে বুঝতে পারলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে।
তা ছাড়া, দিন বদলের জন্য নিজের ভেতরের প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিতে পারাটাই হলো বড় জিহাদ বা লড়াই। তার আগে নিজেকে পরিবর্তনের আলোয় রাঙাতে হবে। নইলে কখনোই অন্যের বা সমাজের বা রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব নয়।
তা ছাড়া, দিন বদলের জন্য নিজের ভেতরের প্রতিভাকে ছড়িয়ে দিতে পারাটাই হলো বড় জিহাদ বা লড়াই। তার আগে নিজেকে পরিবর্তনের আলোয় রাঙাতে হবে। নইলে কখনোই অন্যের বা সমাজের বা রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব নয়।
চলমান প্রেক্ষাপটে সম্ভবত আমাদের সামনে খোলা আছে কয়েকটি পথ।
ক. গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণ বিকশিত হতে দেয়া। প্রচলিত সীমানার মধ্যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া।
খ. সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
গ. মতভেদ ভুলে নাগরিক একতা গড়ে তোলা।
ঘ. ইসলাম ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপ্লবী জীবনের সঠিক পাঠ সবখানে ছড়িয়ে দেয়া এবং
ঙ. সন্ত্রাসবাদ দমনে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশপ্রেমিক গোয়েন্দা ও শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা।"
লেখাটা খুব মনে ধরেছে আবরারের। নিজের এনড্রয়েড ট্যাবে লিংক সেভ করে রাখে লেখাটার। মগজে কেবল রাখাইনের রোহিঙ্গাদের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আসলে আবিদার প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন দুর্বলতা থেকেই কি এমন হচ্ছে? সেটাও বুঝে উঠতে পারছে না আবরার।
"হ্যাঁ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধই তো অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে, স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটা বড় মডেল। আবিদারা যদি এই মডেলকে গ্রহণ করে তাহলে একটা কিছু হতেও পারে।"
সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে আবরার। সিডি প্লেয়ারে বাজছে নচিকেতা ও মানিকের আয় ভোর আয় ভোর, তোর জন্য এই স্বপ্ন দেখা, দিন যায় রাত যায় তোরই অপেক্ষায়, তোকে পেলেই পাবো মুক্তির রেখা...
No comments