Header Ads

❤️‍🩹 নারীর পাপের ভয়।

 


🏵️ পাপের ভয় 🏵️

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। মানুষের আরেকটি শত্রু হলো প্রবৃত্তি। এ দু শত্রু সর্বদাই মানুষকে বিপদগামী করতে চায়। চায় ধ্বংসের অতল গহবরে ডুবিয়ে দিতে। তারা প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করে মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করাতে, উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাফরমানি করতে।

মানুষ অনেক সময় শয়তান ও প্রবৃত্তির পাতা ফাঁদে পা দেয়। সম্পাদন করে অনেক অন্যায় অপকর্ম। চলে ঐ পথে, যে পথ মহান আল্লাহর মনপূতঃ নয়। ডুবে যায় এমন হারাম কাজে, যা জাহান্নামের পথকেই সুগম করে।

কিন্তু এসব মানুষের মাঝে সত্যিকার মানুষ তারাই, যারা শয়তানের ধোঁকা কিংবা প্রবৃত্তির প্ররোচনায় কোনো অন্যায় কর্ম করে ফেললেও পরবর্তীতে অন্তরে জ্বলতে থাকে অনুশোচনার আগুন। লজ্জায় ছেয়ে যায় গোটা অন্তর। পাপের ভয় করে তোলে অস্থির-বেকারার। তাই সে পাপ মোচনের জন্য পেরেশান হয়ে পড়ে। ছুটে বেড়ায় ঐসব স্থানে যেখানে রয়েছে পাপ মার্জনার ক্ষীণতম সম্ভাবনা। অবলম্বন করে ঐ সব রাস্তা যা তাকে ধুয়ে মুছে করে দিবে একদম নিষ্পাপ- নিষ্কলঙ্ক।

হযরত সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এসব ঘটনার বেশ কিছু নজির খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষ হওয়ার কারণে তাদের দ্বারা কখনো কখনো পাপ কর্ম সংঘটিত হয়ে গেছে সত্য, কিন্তু সেই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারা কি পরিমাণ পেরেশান হতেন, কত বেশি চেষ্টা তদবীর চালাতেন তা- ই লক্ষণীয়, তা-ই আমাদের জন্য আদর্শ। কেননা তাঁরা সত্যের মাপকাঠি। পরিস্কার কথা হলো- আদর্শ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের পাপ দেখলে চলবে না, বরং পাপের প্রায়শ্চিত কিরূপ তারা করেছেন সেদিকটিই খেয়াল করতে হবে। এবার আসুন আমরা এ ধরনের একটি ঘটনা শুনি এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খুঁজে বের করি এ ঘটনায় আমাদের জন্য অনুসরণীয় বিষয় কোন্টি।

হিজরি নবম সনের ঘটনা। এক মহিলা সাহাবী পাগলপারা হয়ে দরবারে রিসালাতে উপস্থিত হলেন। বড়ই অস্থির ও পেরেশান মনে হচ্ছিল তাঁকে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো। মুখমণ্ডলে গভীর উদ্বিগ্নতা। চোখে কাতর চাহনি। বললেন-

: হে আল্লাহর রাসূল! আমি ব্যাভিচার করেছি। আমাকে পবিত্র করুন।

: তুমি চলে যাও এবং মহান আল্লাহর নিকট তওবা ইস্তেগফার কর। মহিলার কথার জবাবে কিছুটা বিরুক্তিবোধ প্রকাশ করে তিরস্কারের স্বরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন।

: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি হয়তো (দয়া পরবশ হয়ে) আমার বিষয়টিকে ঐরূপ এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন যেরূপ মায়িজে আসলামির বিষয়টিকেও প্রথমত এড়াতে চেয়েছিলেন। তবে আমার ব্যাপারটি একটু জটিল। কারণ ব্যভিচারের পরিণতিতে আমার পেটে সন্তান এসে গেছে। (অতএব আমি অন্যায়কারিণী এবং এ অন্যায়ের শাস্তি আমি প্রাপ্য- এতে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই)

এরপরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরপর তিনবার তাকে ফিরিয়ে দিলেন। যখন তিনি চতুর্থবারও একই কথার স্বীকারোক্তি করলেন, তখন রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, গর্ভাবস্থায় তোমাকে কিছু করা সম্ভব নয়। তুমি এখন চলে যাও। বাচ্চা প্রসব হওয়ার পর এসো।

এরপর কয়েক মাস অতিবাহিত হলো। জন্মগ্রহণ করলো একটি ছেলে সন্তান। এখন তাঁর আর সহ্য হচ্ছে না। কয়েকটি দিনই যেন তাঁর কাছে কয়েক মাসের মতো মনে হচ্ছে। একদিন তিনি বাচ্চাটিকে কাপড়ে জড়ালেন। তারপর তাকে কোলে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। আরজ করলেন-

: হে আল্লাহর রাসূল! আমি সন্তান প্রসব করেছি। সুতরাং আমার উপর শরিয়তের নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করতে এখন আর কোনো বাধা নেই।

: সন্তানের জন্য মায়ের দুধ অপরিহার্য। তাই এখন তাকে নিয়ে যাও। দুধ পানের বয়স শেষ হলে তারপর এসো।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথায় মহিলা তার সন্তানকে নিয়ে বাড়ি চলে এলেন। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তাকে দুধ পান করালেন। এক সময় দুধ পানের বয়স অতিক্রান্ত হলো। বাচ্চাটি এখন অন্য খাবার খেতে শিখলো।

একদিন দেখা গেলো, মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক টুকরো রুটি দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে পুনরায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ছেলেটির দুগ্ধ পানের সময় শেষ হয়েছে, সে এখন অন্য খাবার গ্রহণে সক্ষম।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি এবারও চলে যাও। বাচ্চাটিকে লালন পালনের জন্য কারো আশ্রয়ে দিয়ে তারপর এসো।

সময় বয়ে চললো। অল্প সময়ের মধ্যে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বভার একজন মুসলমানের উপর অর্পিত হলো। অবশেষে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী পাথর মেরে মহিলাটির মৃত্যু কার্যকর করা হলো।

প্রিয় পাঠক! আলোচ্য ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, উক্ত সাহাবী এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও তার স্বীকারোক্তি পুনরায় বিবেচনা করার প্রতি মোটেও ভ্রূক্ষেপ করলেন না। অথচ তিনি যদি এই সময়ের মধ্যে একবারও স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করতেন তবে তার উপর রজম বা প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার বিধান কার্যকর করা হতো না। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষ অনেক সময় আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেক কিছু করতে চায়। কিন্তু কঠিন বিপদ বা শাস্তির সম্মুখীন হলে অথবা সময়ের ব্যবধানে আবেগ চলে গেলে সেই কাজ করবে তো দূরের কথা, মুখে উচ্চারণ করতেও দ্বিধা করে। কিন্তু উক্ত সাহাবীর বেলায় এমনটি হয়নি। বরং তার বাহ্যিক আচরণ দ্বারা এটাই বুঝা গিয়েছে যে, পাপের ভয়ে তার অন্তরে যে অনুতাপ ও অনুশোচনার আগুন প্রজ্জলিত হয়েছিলো, সেই আগুন শত শত পাথর বর্ষণেও নির্বাপিত হয় নি। আর সে জন্যেই তার অন্তরে স্থান পায় নি স্বীকৃতি প্রত্যাহারের ক্ষীণতম সম্ভাবনাও।

বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-১



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪


🌹 ধন্যবাদ 🌹

মুহতারাম পাঠক! পাপের দরুন অন্তরে কিরূপ অনুতাপ-অনুশোচনা সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন, আলোচ্য ঘটনাই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই আসুন, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা না করে, প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা আমাদের জন্য যে আদর্শ রেখে গেছেন তাই আমরা অনুসরণ করি। চেষ্টা করি সেই অনুপাতে জীবন গঠনের। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের তাওফীক দাও। আমীন। (সূত্রঃ মিশকাত শরীফ)

No comments

Powered by Blogger.
Chat with us on WhatsApp