Header Ads

❤️‍🩹 সাহসী মায়ের অমর কাহিনী


 সাহসী মায়ের অমর কাহিনী

কাদেসিয়ার বিশাল প্রান্তর। ৬৩৫ খিস্টাব্দ। মোতাবেক ১৬ হিজরি। মুসলমান ও কাফের সৈন্যদের পদভারে কাদেসিয়ার প্রান্তর আজ প্রকম্পিত। মুসলমানদের সৈন্যসংখ্যা ত্রিশ হাজার। তাদের সেনাপতি হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)। কাফেরদের সৈন্য সংখ্যা এক লক্ষ বিশ হাজার। অস্ত্র সস্ত্রে পূর্ণ সুসজ্জিত। সেনাপতি তাদের মহাবীর রুস্তম।

কাদেসিয়ার যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য ঈমানের অগ্নি পরীক্ষার এক কঠিন জিহাদ। এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন মহিলা সাহাবী হযরত খানসা (রা.)। তিনি ছিলেন নজদের অধিবাসী। প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণতা আর অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারিণী। সেই সঙ্গে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা কবি হিসেবে। তার কবি প্রতিভার প্রশংসা করতে গিয়ে উসদুল গাবা প্রন্থের রচয়িতা লিখেছেন, সকল ঐতিহাসিক এ ব্যাপারে একমত যে, খানসা (রা.)-এর আগে বা পরে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি আর কেউ ছিল না। উমাইয়া যুগের প্রসিদ্ধ কবি জারীরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, এ যুগের সবচেয়ে বড় কবি কে? জবাবে তিনি বলেছিলে 71 খানসা না হলে আমি হতাম।

মক্কার আকাশে রিসালাতের সূর্য উদিত হয়ে চারদিকে যখন আলোর আভা বিকিরণ করছিল তখন সে আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল মরু আরবের সেই বিখ্যাত মহিলা কবি বিবি খানসার চক্ষুও। তাই পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের সাথে মদীনায় আগমন করে দয়ার নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তিনিও আশ্রয় নিয়েছিলেন ইসলামের সুশীতল ছায়ায়। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘক্ষণ তার কবিতা শুনেন এবং তার কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ ও বিমোহিত হন।

হযরত খানসা (রা.) শুধু যে একজন কবি ছিলেন তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন বীরঙ্গনা নারীও। তাঁর বীরত্ব ও সাহসিকতা যুগ যুগ ধরে আগত নারী জাতির জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। তিনি যখন কাদেসিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে শরিক হন, তখন তিনি একাই শরিক হন নি, কলিজার টুকরা চার পুত্রকেও সঙ্গে নিয়ে যান। শুধু তাই নয়, পুত্ররা যাতে আকাশসম হিম্মত নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে, কোনো অবস্থাতেই যেন পিছু না হটে সেজন্য তিনি যুদ্ধের পূর্ব রাত্রে ছেলেদের উদ্দেশ্য করে এক মর্মস্পর্শী ভাষণ দেন। তিনি তাঁর অগ্নিঝরা বক্তব্যে বলেন-

হে আমার কলিজার টুকরা সন্তানেরা! তোমরা আনন্দচিত্তে ইসলাম গ্রহণ করেছো। নিজ খুশিতেই হিজরত করেছো। সেই খোদার কসম করে বলছি যিনি ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই- যেমনিভাবে তোমরা এক মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছো, ঠিক তেমনিভাবে তোমরা এক পিতার সত্য সন্তান। আমি তোমাদের পিতার সাথে ছলনা কিংবা প্রতারণা করি নি। নিজ চরিত্রের দ্বারা তোমাদের মাতুল গোত্রকেও যেমন লাঞ্ছিত করি নি তেমনি কলঙ্কিত করি নি তোমাদের বংশ গৌরবকেও। তোমাদের বংশধারা নিষ্কলুষ, নিষ্কলঙ্ক।

প্রিয় সন্তানেরা! তোমাদের জানা আছে আল্লাহর পথে জিহাদ করার ছওয়াব কত বেশি। মনে রেখো, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। সকলকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতেই হবে। পক্ষান্তরে আখেরাতের জীবন চিরস্থায়ী। সে জীবন একবার শুরু হলে কখনো তা শেষ হবে না। উপরন্তু দুনিয়ার জীবন অপেক্ষা আখেরাতের জীবন অনেক উত্তম। তাই ভীরু কাপুরুষের মতো মৃত্যুবরণ না করে বীর বাহাদুরের মতো জিহাদের ময়দানে শহীদ হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

স্নেহের ছেলেরা! শুনো, এ হচ্ছে কাদেসিয়ার রণাঙ্গন। কঠিন পরীক্ষার সময় এখন। আগামীকাল সকালে তোমাদের যুদ্ধের ময়দানে যেতে হবে। আমি চাই, তোমরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বীরবিক্রমে যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হও। দুশমনদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহর সাহায্য নিয়ে • সম্মুখে অগ্রসর হও। যুদ্ধের লেলিহান শিখা যখন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে, তোমরা তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে শত্রু বাহিনীর উপর পঙ্গপালের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়বে। ভীরু কাপুরুষের মতো হিম্মতহারা হয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসবে না।

পরদিন যুদ্ধ শুরু হলে মায়ের উপদেশ অনুযায়ী ইসলামের এই সূর্য সৈনিকরা আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারপর ইতিহাসের পাতায় জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন অসীম শৌর্যবীর্য আর অপরিসীম সাহসিকতার। তাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় জিহাদের ময়দান। আল্লাহর রাহে শহীদ হন একে একে চার ভাই-ই। সকলেই আস্বাদন করেন শাহাদাতের পিয়ালা।

সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। কিছুক্ষণ পূর্বে যুদ্ধ শেষ হয়েছে। মুসলমানদের বিজয় সূচিত হয়েছে। শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে পারস্য সম্রাটের বিশাল বাহিনী। সেই সঙ্গে নিহত হয়েছে পারস্য সম্রাটের অহংকার মহাবীর রুস্তমও।

এদিকে বিধবা নারী খানসা (রা.) পুত্রদের আগমন অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। দেখছেন- অনেক মা, বোন তাদের স্বামী, সন্তান ও ভাইদের নিয়ে ফিরে আসছে। তারা আনন্দ প্রকাশ করছে। কিন্তু তাঁর পুত্ররা আসছে না। মুজাহিদের দল আসে, আবার চলে যায়, কিন্তু সেখানে তাঁর ছেলেদের কোনো দেখা নেই।

বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর এক সময় তিনি খবর পেলেন তার চারটি ছেলেই দীনের জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদের মর্যাদা লাভ করেছেন। এ সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কবি খানসা (রা.)-এর চেহারায় হাসির ভাব ফুটে উঠলো। মুজাহিদরা ভাবলো, চার পুত্র হারানোর শোকে মহিলা বোধ হয় পাগল হয়ে গেছেন। এখনই তিনি দুঃখের ভার সইতে না পেরে কাপড় ছিঁড়তে শুরু করবেন। রক্তাক্ত করে দিবেন মাথাটাকে পাথরে ঠুকে ঠুকে।

কিন্তু ক্ষণকাল পর সকলকে অবাক করে দিয়ে হযরত খানসা (রা.) বললেন, সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি আমার ছেলেদের শাহাদতের অসিলায় আমাকে ইজ্জত দান করেছেন। আজ আমার মহা আনন্দের দিন। আমার মতো ভাগ্যবতী মা আর কে আছে? আমার চার সন্তানকে আমি বিনা হিসাবে জান্নাতে পাঠাতে পেরেছি। এদেরকে গর্ভে ধারণ করে আমার নারী জীবন স্বার্থক হয়েছে। হে আল্লাহ! তুমি আমার চার পুত্রকে কবুল করে শহীদের মা হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছো। এ আনন্দ আমি রাখব কোথায়? হে রাহমানুর রাহীম! কিয়ামতের মাঠে আমি গর্ব করে বলবো, আমি চার শহীদের মা। আমি তোমার নিকট এ আশা পোষণ করি যে, ছেলেদের সাথে আমাকেও তুমি আপন রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবে।

সম্মানিত মা ও বোনেরা! উল্লেখিত ঘটনা দ্বারা বুঝা গেল, পৃথিবীর বুকে আল্লাহর এমন বাদীও রয়েছেন যিনি আপন চারজন যুবক সন্তানকে যুদ্ধের অনলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন, আবার সকলেই শহীদ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহর দরবারে প্রাণ ভরে শুকরিয়া আদায় করছেন। তাই আসুন, আমরাও আমাদের সন্তানদেরকে সত্য পথের সৈনিক হিসাবে তৈরি করি। ইসলামের শত্রুদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেওয়ার প্রেরণা যোগাই। তবে হ্যাঁ, আপনার এ তৈরিকরণ ও প্রেরণা প্রদান যেন অবশ্যই ইসলাম সমর্থিত হয়। অর্থাৎ এমন যেন কখনোই না হয় যে, আপনি আপনার সন্তানকে কিংবা অন্য কাউকে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে এমন পথে উদ্বুদ্ধ করলেন যা গোটা বিশ্বের আলেম সমাজের নিকট কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করা, আত্মঘাতি বোমা হামলা চালানো ইত্যাদি।

বাংলাদেশি যুবক ও এক রোহিঙ্গা তরুনীকে নিয়ে লেখা "আমিরুল মোমেনিন মানিক" দারুন এক উপন্যাস লিখেছে পড়ে দেখুন ভালো লাগবেই। ৪ টি ছোট ছোট পর্বে সমাপ্ত হয়েছে।



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-১



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-২



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৩



▶️ রোহিঙ্গা তরুনী পর্ব-৪


🌹 ধন্যবাদ 🌹

 হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ইসলামের মর্মবাণী সঠিকভাবে বুঝে তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক দাও। আমীন।

No comments

Powered by Blogger.
Chat with us on WhatsApp